সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১

বিরোধিতা মানে শুধু অন্ধ বিরোধিতা নয়

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাস আর দাম যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে যার প্রভাব দেশের জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক অন্দরে সর্বত্র পড়েছে। ভারতবর্ষের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যথেষ্ট কাজ করে চলেছে কিন্তু রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে গিয়ে মানুষে মনে বিরূপ কেন্দ্রীয় মনোভাব মানুষের মনে জাগিয়ে তুলেছে যেখানে তারা রাজনৈতিক ভাবে সার্থক। বিরোধিতা মানে কি শুধু অন্ধ বিরোধিতা? ভারতবর্ষের সব জায়গায় ১৪কেজি ভুর্তুকিযুক্ত দেশীয় সিলিন্ডারের দাম ৬১০টাকা থেকে ৭১০টাকা বেড়েছে যা নিঃসন্দেহে একটি ব্যথা তবে কেন এই বৃদ্ধি হয়েছে সেই প্যাটার্নটা আগে বোঝা উচিত। ২০১৫ সালের এলপিজির কভারেজ ছিল ৫৮%, ২০২০ সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ৯৮% সেখানে উজ্জলা স্কিমের মাধ্যমে ৪ কোটিরও বেশি সংযোগ অন্তরর্ভুক্ত ঘটেছে, এর ভিতরে ৯০% ভুর্তুকিযুক্ত এলপিজি গার্হস্থ্য পরিবারগুলো গ্রাস করে।



এলপিজির ট্রেন্ড ইনডেন ৩০% মার্কেট শেয়ার

ডিসেম্বর ২০১৪ - ৭৪৯/-
ডিসেম্বর ২০১৫ - ৬২১/-
ডিসেম্বর ২০১৬ - ৫৯৩/-
ডিসেম্বর ২০১৭ - ৭৫৬/-
ডিসেম্বর ২০১৮ - ৮২৭/-
ডিসেম্বর ২০১৯ - ৭১৪/-
ডিসেম্বর ২০২০ - ৬৬০/-
এপ্রিল ২০২১ - ৮৬২.৫০/-

এবার বুঝতে হবে এলপিজির দাম কিভাবে নির্ধারিত হয়? ভারতে এলপিজির মূল্য আমদানি প্যারিটি প্রাইসের (আইপিপি) ভিত্তিতে করা হয়। ভারত সৌদি আরবের দাম মার্কিন ডলারে অনুসরণ করে। অভ্যন্তরীণ ফ্রেইট আর দাম, বিতরণ ব্যায় এবং ওএমসির মার্জিন, বোতলজাত করণের চার্জ, ডিলার কমিসন এবং জিএসটি এর সঙ্গে যুক্ত।  


ভারত কেন মূল্য নির্ধারণ করেছে? ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর এলপিজির উৎপাদন ছিল ৮.৪ মিলিয়ন টন, এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসে এলপিজির খরচ ছিল ১৭.১ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ভারত মধ্যপ্রাচ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘাটতি রফতানি করে।


পূর্বতন উপিএ সরকারের ফেলে আসা তেল নির্মাতাদের ৩৫০০ কোটি টাকার তেল বন্ড এই বর্তমান সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে যার সুধের পরিমান ৯০০০ কোটি টাকা আজও অব্যাহত রয়েছে। ১০০০০ কোটি টাকা মূল বকেয়া ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা ২০২১ সালের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।


সুদের পরিশোধ এবং মুলতুবি মূল্যায়ন পরিশোধের অন্যতম কারণ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার পরিবহন ও এলপিজির দাম হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে। আরো বেশী ভূর্তকি কেবল ভবিষ্যতের সমস্যা বোঝায়। 


২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ভারতে এলপিজির বৃদ্ধি এবং প্রিসিং ব্রেকআপ এর ডাউন পয়েন্টিং দিলাম



অন্ধ বিরোধিতা না করে ঠান্ডা মাথায় বিচার করলে বোঝা যায় কেনো এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে।








শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

শকুনের মতো ওঁৎ পেতে রয়েছে

বাবাজী কা ঠুল্লু

১৯৪৭ সালে ভারতের মোট জিডিপির এক/তৃতীয়াংশ ছিল এবং ভারতের সমগ্র শিল্প উৎপাদনে ৩০% ছিল। আজ, জিডিপির শেয়ারটির নিচে নেমে এসেছে এবং শিল্প উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৫% আমি কমিউনিস্টদের জিজ্ঞেস করতে চাই...কে এর জন্য দায়ী? ৬৫০০০ কল-কারখানা তালা ঝুলানো সিপিএমের কাছে কোন জবাব আছে? সিপিএম এর ট্যাকটিস - আসল প্ল্যান - অর্থনীতি ধ্বংস, আজ কাজ চাই, জিডিপি দিন-দিন কমে যাচ্ছে...পরেরদিন রাস্তা...ব্যবসা বন্ধ করো...ধর্মঘট করো - (উদাহরণ গত বছরে ই-আমাজন, স্টারলাইট, উইনস্ট্রোম, জিও ইত্যাদি তে) রাস্তায় চিল্লাবে কাজ চাই.... ১৯৬৫- সিপিএমের জঙ্গি আন্দোলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গে ১৭৯ টি শিল্প ধর্মঘট ও ৪৯ টি শিল্প কারখানাতে লক-আউট হয়েছিল, ১৯৭০- সিপিএম এর জঙ্গি আন্দোলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গে ৬৭৮ টি শিল্প ধর্মঘট ও ১২৮ টি শিল্প কারখানাতে লক আউট হয়েছিল। ১৯৬৫ এ পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্টদের যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেই সার্কুলার জারি করলো যে লেবার ডিপার্টমেন্টের পারমিশন ছাড়া পুলিশ কোনো শিল্প কারখানা ঘেরাও এ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না অর্থাৎ শিল্প-ধ্বংসকারী জঙ্গী কমিউনিস্ট শ্রমিক ইউনিয়ন গুলোর নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে করে দেওয়া হল, জ্যোতি বসুর ভাষায় শিল্পপতিরা হল শ্রেণীশত্রু এই জন্য তাঁদের উপর জ্যোতি বসুর কোন মায়া মমতা নেই, লোকটা আবার করদাতাদের টাকায় ক্যানাডা ইউকে গিয়েছিল উদ্যোগপতির খোঁজে। নিয়ে এসেছিলেন "বাবাজী কা ঠুল্লু"। 

জ্যোতি বসু শিল্প ধরতে যাচ্ছি নামে নামের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সরকারি টাকাতে ওর রাজত্বের প্রথম ১২ বছরে ২২ বার ইংল্যান্ড গেছিলো- পরে ধরা পরে যাওয়ায় আর যেত না। জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু বিস্কুট এর কারখানা খোলার কিছু আগে আগেই হঠাৎ করে কলকাতা তথা ভারতবর্ষের বাঙালি মলিকের দুইটি প্রখ্যাত বিস্কুট বানানোর কারখানা সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর দাপটে বন্ধ হয়ে যায়। কম্যুনিস্টরা সত্তরের দশকে ট্রাক্টর বিরোধিতা করেছিল, ৯০ এর দশকে কম্পিউটার এর বিরোধিতা করেছিল, এখন কৃষিবিলের বিরোধিতা করছে...সংস্কার স্তব্ধ করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়াই এদের কাজ। স্বাভাবিকভাবেই কম্যুনিজম নামক ফেইলড থিওরি ধ্বংস ছাড়া কোনও গঠনমূলক কাজ করতে পারেনা। ২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার হাতে ছিল? কর্মসংস্থানের ভাওতা কারা দেয়? ভাত দে...ভাত দে...করে চেঁচায় কারা? সবচেয়ে বেশী শিল্পের ওলা উঠেছে কাদের সময়? সেন্সাস রিপোর্ট বলছে এই দশ বছরে কর্মসংস্থান জন্য প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যরাজ্য গুলোতে চলে গিয়েছে। বিস্কফার্ম বাঙালি বাবুর বিশুদ্ধ বাঙালি কোম্পানি, কলকাতায় উলুবেড়িয়াতে অফিস...ভেবেছিলো ধুলাগরে বা ঝাড়গ্রামেও খুলবে কম্যুনিস্টরা এমন হাল্লাকাটি শুরু করে দিলো জমি দেওয়া নিয়ে ধুত্তোর বলে চলে গেলেন হিমাচল প্রদেশে। ক্রাইসিস তৈরী না হলে কম্যুনিজম পাত্তা পে না। "অটোমেশন রাখছি রুখবো" কাদের স্লোগান ছিল? যখন হংকং ব্যাঙ্ক প্রথম কম্পিউটার আনার চেষ্টা করেছিল...দুর্জয় আন্দোলনে ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গেছিলো। ১৯৯১তে কলকাতাকে ভারতবর্ষের আইটি হাভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল সিপিএম সেটি হতে দেয়নি...কলকাতার জায়গায় অগত্য বাঙ্গালুরে সেই তকমা পায়, আর সুদূর প্রসারী প্রভাব আমাদের পশিমবঙ্গের যুবসমাজ আজও টের পাচ্ছে।

যেই আপেল কোম্পানি মোবাইল তৈরির কারখানা চীন থেকে ভারতে এলো ওমনি কমিউনিস্টদের দালাল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই কর্ণাটকের কলুরে উইনস্ট্রোন কোম্পানির ফোন তৈরির কারখানা ভাংচুর করে...উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক ভাবে ভারতে শিল্প বান্ধব পরিবেশ নেই সেটা প্রচার করা। আমাদের বামপন্থী বন্ধুরা দাবি করেছেন বিজেপি অর্থনীতি বোঝে না। তাই বিজেপি সিএএ নিয়ে গোলমাল পাকাচ্ছে, এটা ঠিক যে গত ৩৪ বছরে যে দুই জন অর্থমন্ত্রীদের তারা উপহার দিয়েছিলেন তারা সবাই প্রেসিডেন্সি থেকে পাশ করে বিদেশে পিএইচডি করেছিলেন এছাড়া দুইজন প্রেসিডেন্সি থেকে বামপন্থী রাজনীতি করা নোবেল প্রাপক কিন্তু তাতে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ঝুলিতে কি এসেছিলো? ৮০র দশক পর্যন্ত কলকাতা হোসিয়ারি শিল্পে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এরপর সিপিএম আর জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন এর ১৪৪ দিন ধর্মঘটের আঘাতে সেই শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়, আশঙ্কা করা হয়েছিল যে এই ধর্মঘট করা হয়েছিল সিপিএমের মালিক চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে কারণ এরপর পরেই ৯০এর দশক থেকে চীন সারা বিশ্বের টেক্সটাইলে বাজারে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে ওঠে।

শিল্পের ভ্রূণহত্যা নিয়ে মোহাম্মদ সেলিমের মোরাকান্না আর মমতার এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রির ঘোষণা বেশ হাসির খোরাক জোগাতো, যদি না পরিণতিটা এত করুন হতো। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকে গণহত্যা করেছে সেলিমের লাল শয়তানরা, আর একটু যে আশা জেগেছিলো তাকে হত্যা করলেন মাননীয়া টাটা মোটরসকে তাড়িয়ে। ৬০/৭০ দশকের থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও বৃদ্ধির ব্যাপারে সিপিএম ও নকশালদের  কোনও দায়বদ্ধতা ছিল না...দেশভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের থেকে আগত বাঙালি হিন্দুরা কিছু না ভেবে...না বুঝে এই কমিউনিস্টদের পদাতলে চলে আসে যাতে পশ্চিমবঙ্গবাসীদের দুর্দশা, বেকারত্ব ও দরিদ্র বাড়ে, যে সব কারখানা ধর্মঘটের স্বীকার হয় তারা বেশিরভাগই অন্য রাজ্যে চলে যেতে লাগে বাঙালির ঘরে ঘরে বেকারক্ত ও দরিদ্র বাড়ে এই সমস্ত নানা কারণে (এমার্জেন্সি, কংগ্রেসীদের অত্যাচার ইত্যাদি) এরপরে বামফ্রণ্ট ক্ষমতায় আসে তারা মানুষকে আরো দরিদ্রতর করার নেশায় এগিয়ে যেতে থেকে শিল্প, শিক্ষা ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রভাব পরে তারফলে লোকদের কারিগরি ও অন্য নৈপুণ্য কমতে থাকে...মানুষকে ভিখারি বানানোর ষড়যন্ত চলতে থাকে নিপুন ভাবে। লোককে ভুল বোঝানো...ওয়েলথ তৈরী ব্যাকফুটে চলে যায়, সমভাবে বন্টন হবে বলে মিথ্যা প্রোপাগন্ডা চালাতে থাকে, ফলস্বরুপ রাজনৈতিক জ্ঞান এর অভাব ও ঐতিহাসিক ভাবে দুর্বল জাত বাঙালি আরও নতুন বিনিয়োগ টানতে পারেনা...নতুন শিল্প আসাও বন্ধ হয়ে যায়, এর সুদূরপ্রসারী কুফল হলো আজকের কর্ম, বিনিয়োগ, অনুশাসন বিমুখ বাঙালি জাতি তৈরী যারা বাইরের পৃথিবীর উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না, এর কারিগর কমিউনিস্টরা ও তাদের ৩৪ বছরের নৈরাজ্য ধ্বংসের রাজনৈতিক শাসন। মানুষকে শিল্প ও শিল্পপতিদের ঘৃণা করা মানসিকতা শিখিয়ে বাঙালীজাতিকে ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। সিপিএম মানুষের দরিদ্রদের বেসাতি করে বেঁচে আছে এটাই তাদের রাজনৈতিক মূলধন এমনকি নতুন বাঙালি প্রজন্মের কাছেও নতুন ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করার মানসিকতা নেই। শিল্প বিরোধী...শিল্প ক্ষেত্রে ঝামেলা সৃষ্টি করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী করা এদের ব্যবসা।

চীনের বৈশ্বিক অৰ্থনৈতিক কর্মকান্ডের শুরু ৯০এর দশকে...সোভিয়েতের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও পতন থেকে শিক্ষা নিয়ে ওরা সমগ্র বিশ্বের পুঁজিকে আমন্ত্রণ করার জন্য ওরা ওদের দেশের আইনের যা যা ফেরবদল করেছিল সেই সবগুলি এখানকার কমিউনিস্টরা চরম বিরোধিতা প্রতিরোধ করেছিল এবং আজও করছে। কর্নাটকে ১৩০০ কোটি টাকার লগ্নী করার কথা ছিল আইফোন এর সেখানে কতো ভাঙচুর লুঠপাঠ চালানো হলো যা সবকিছুই সংঘঠিত হয়েছিল চীনের নির্দেশে এমনকি চাইনিজ মিডিয়াও ফলাও করে সেই খবর ছেপেছে, পুলিশের হাতেও গ্রেফতার হয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের লিডার...এরাই আবার ভাত চায়। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমান ৭০ হাজার কোটি...এরপরেও তারা বলবে ভারতে জিডিপি কম হচ্ছে কেন সেটা নিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করে লেকচার দেবে। 

* সেক্টর ৫ এ ৫০০০০ কর্মী দেখিয়ে যে আইটি বিপ্লব আর কথা বলা হতো, তা CTS/Infosys/TCS এর একটা দক্ষিণ ভারতের ক্যাম্পাসেই পাওয়া যাবে। 
* সকালের টুথপেস্ট থেকে রাতের ঘুমের ওষুধ কিছুই এই রাজ্যে আজ আর প্রস্তুত হয় না। 
*গত ৪৩ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকদের ৯৫% আজ রাজ্যের বাইরে। 
* ভিনরাজ্যে রিক্সাওয়ালা থেকে বাড়ির কাজের লোকের কাজ বাঙালিদের করতে হচ্ছে এমনকি কাশ্মীরের আপেল কুড়াতেও দ্বিধা করছে না যা প্রমাণ করে কাশ্মীরের চেয়েও এই রাজ্যের শ্রমিকদের মাইনে কম।
 
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির থেকে পয়সা খেয়ে বিশ্বমঞ্চে শিল্পায়ন পরিবেশ নিয়ে ভারতের বদনাম করার জন্য ৭০ দশকে এরা পশ্চিমবঙ্গতে শিল্প বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলো এবং সেই পরিস্থিতি কে কাজে লাগিয়ে চীন বিশ্বের শিল্পপতিদের নিজেদের দেশে বিনিয়োগ করিয়ে আজকে এশিয়ার সুপার পাওয়ার। 

সবশেষে বলি, যে রাজ্যে পেঁয়াজের জন্য মহারাষ্ট্র, ডিমের জন্য কর্ণাটক, মাছের জন্য অন্ধ্র, সিভিল সার্ভেন্টের জন্য বিহার, চিকিৎসার জন্য ভেলোর আর ব্যর্থতার দোষারোপের জন্য সর্বদা দিল্লির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় সে রাজ্যের অন্তত নিজেদের সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিদ্যার বড়াই করা সাজে না। 

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০

করোনার প্রভাব পরিবেশে



বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাব নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। মৃত্যুর মিছিল, অর্থনৈতিক সংকট, কর্মসংস্থান সংকোচনের পরিসংখ্যান তো আছেই। এই গ্রহের প্রভাব কি পড়ল তারও উত্তর খুঁজে পেয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, বিশ্বের সব প্রান্তেই কোয়ারিন্টিনের প্রভাবের ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের পরিমান নিশ্চিন্তভাবে কমেছে, তবে এতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ঘনত্বের ওপর তেমন কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি।

কার্লসরুহে ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি গবেষকরা ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে গ্যাসের ঘনত্বের ওপর একটি তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ করেন, তাঁরা সামান্য পরিবর্তন লক্ষ করেন। যদিও সেই পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ছিল। চলতি বছর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যত পরিমান কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকার কথা ছিল, সেই পরিমানের সঙ্গে তুলনা করে এই হিসাব তাঁরা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মহামারীর সময়ে বিভিন্ন দেশের পরিবহন ও উড়ান পরিষেবার একই বড় অংশ বন্ধ থাকার কারণে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ঘনত্ব কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন। তাদের মতে, যদি দশকের পর দশক ধরে এই বিধিনিষেধ চলতে থাকে তবেই তা সম্ভব হবে।

জলবায়ু সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তির মূল লক্ষই হল, শিল্প বিকাশের রমরমা হওয়ার আগে বিশ্ব উষ্ণয়ন যে পর্যায় ছিল তার থেকে অন্তত দেড় ডিগ্রি ওপরে তাকে বেঁধে ফেলা। এটি সম্ভব ধারাবাহিকভাবে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের নিঃসরণ কমানোর মাধ্যমে। ২০২০ সালে এই পরিমান প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে এই কথা ঠিক, সেই সঙ্গে এইকথাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে চলতি বছর শিল্পউৎপাদনও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

উন্নয়নের অন্তরায় সংকীর্ণ রাজনীতি




ভারতের প্রত্যেকটি রাজনীতি দল দেশের শ্রমিক ও কৃষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে। নির্বাচনের মুখে প্রকাশে জনসভায় প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়। নির্বাচনের পর মুখে কুলুপ এতে বসে থাকে। কৃষকের সমস্যা সমাধানে অধরাই থেকে যায়। যুগ যুগ ধরে এই ধারাই চলে আসছে। এখন সবজির দাম বেড়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবাদ সভা করছে। ক্ষমতাসীন দলকে গালমন্দও করা হচ্ছে। আলুর মূল্যবৃদ্ধির জন্য অনেক কারণ থাকতে পারে। আলু হিমঘরে মজুত করা ছিল। চাহিদা অনুযায়ী দাম বেড়েছে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের কর্তব্য। বর্তমানে যেভাবে আলুর দাম বেড়েছে তাতে কৃষকের কোনো লাভ নেই। তাদের লাভ-লোকসানের হিসাব ফসল তোলার সময়ই হয়ে যায়। এখন যেটা হচ্ছে, সেটি মজুদদারের কারসাজি। কিন্তু আলু বাদে অন্য সবজি কৃষকেরা সরাসরি বাজারে নিয়ে আসেন, তাঁরা যদিও লাভের মুখ দেখতে পান তবে সবারই আনন্দও হওয়ার কথা। সবজি ফলাতে পরিশ্রম, সার, বীজ, সেচের জল সবই প্রয়োজন হয়। কৃষকের লোকসান হলে পেটে হওয়া ভরে দিনাতিপাত করা ছাড়া উপায় নাই।

 যখন লঙ্কা বা টমেটোর বাজারদর তলানিতে থেকে ছিল, তখনও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি রাস্তা অবরোধ করে, লঙ্কা ছিটিয়ে প্রতিবাদ সভা করেছিল। কৃষকদরদী ভাষণ সোনা গিয়েছিলো। এখন ঠিক উল্টো, সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রশ্ন তুলে সবাই কার্যত কৃষকবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। আমাদের এই দেউলিয়াপনা ও সস্তার রাজনীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে তবেই শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রেষারেষিও কমবে। দেশে শান্তি বিরাজ করবে। এসব বিষয়ে নেতা-নেত্রীরা কি বোঝেন? খুব বোঝেন, সমস্যা ছাড়া রাজনীতি যে একেবারে অচল।   

রাজবংশী সমাজে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার শিক্ষা


উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিভাবান সমাজ সংস্কারক ও যুগপুরুষ পঞ্চানন বর্মা অবহেলিত, নিপীড়িত, আর্তসমাজে ছিলেন মুক্তিদূত। তিনি ছিলেন জনদরদি, জননায়ক, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, সুসাহিত্যিক, নারীমুক্তি আন্দোলন এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের পথিকৃৎ। ওঁনার বাল্যজীবনে শিক্ষার শুরু গ্রামের পাঠশালায়। ১৮৮৫ সালে মাথাভাঙ্গা স্কুলে থেকে মধ্যে ইংরেজি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস এবং রাজশাহি বিভাগে (কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, রংপুর ও মালদা জেলা) প্রথম স্থান অধিকার করে জীবনের শুরুতেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। ১৮৮৯ সালে কোচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (উচ্চ ইংরেজি) পাস করার পর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে সংস্কৃত শাস্ত্রে অনার্স সোহো বিএ পাস করেন। তিনিই ছিলেন অবিভক্ত বাংলা, বিহার, অসমের রাজবংশী সমাজের মধ্যে প্রথম, যিনি এই শিক্ষা অর্জন করে ছিলেন।

 উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মজীবনে তৎকালীন কোচবিহার রাজ্যে সম্মানযোগ্য পদ না মেলায় তিনি ১৯০১ সালে পার্শ্ববর্তী জেলা রংপুর জজকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। উচ্চশিক্ষিত এমএ বিএল উকিল পঞ্চাননকে রংপুর জজকোর্টের বারে হেনস্তা হতে হয়। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। অদম্য উৎসাহ নিয়ে তিনি ওকালতির সঙ্গে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রংপুর শাখার সঙ্গে যুক্ত হন এবং ত্রৈমাসিক রংপুর সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায় সম্পাদক পদ অলংকার করেন। তিনি ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত সম্পাদক পদে ছিলেন। এই কয়েক বছরে তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ, কবিতা ইত্যাদি রচনা করেন। পঞ্চানন বর্মার মূল্যবান রচনাগুলি "কথা ও ছিল্কা", "রংপুরের রূপকথা" শিরোনামে প্রকাশ করেছেন। এছাড়া "বাহা সে বান্ধব", "জগন্নাথী বিলাই" ইত্যাদি তাঁর রচনাশৈলী ও ভাষা সাহিত্যে গভীর জ্ঞানের পরিচয় বহন করে।

ওকালতি এবং সাহিত্য সম্পাদনার পাশাপাশি তিনি অবহেলিত, অত্যাচারিত, বঞ্চিত, হতদরিদ্র বিশাল রাজবংশী সমাজের উন্নতিবিধানে আত্মনিয়োগ করেন। সেই সময় সমাজে গভীর নৈরাজ্য ও ক্ষোভ চলছিল। যুবকের মতো কর্মশক্তি, উদ্যম, সাহস, সংগঠনশৈলী, দৃঘ্যতা, নির্ভীকতা নিয়ে নিজের এবং জাতির অপমানে অপমানিত হয়ে ওকালতি এবং সাহিত্য সেবা জলাঞ্জলি দিয়ে সমগ্র রাজবংশী সমাজের ক্ষত্রিয় আন্দোলনে সম্পূর্ণরূপে আত্মনিয়োগ করেন ঠাকুর পঞ্চানন।

উত্তর বাংলায় ক্ষত্রিয় আন্দোলনের সময় হিন্দুধর্ম ত্যাগের প্রবণতা প্রচণ্ডভাবে দেখা দিয়েছিলো। পঞ্চানন বর্মার ক্ষত্রিয় আন্দোলন শুধু রাজবংশী সমাজকেই রক্ষা করেনি, গোটা হিন্দু সমাজকেই ধর্মত্যাগের প্রবণতা থেকে রক্ষা করেছিলেন। অনেকেই এই সময়টিকে পঞ্চাননের যুগ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। উত্তরবাংলার হিন্দুসমাজ পঞ্চানন বর্মার কাজে কৃতজ্ঞ। পঞ্চানন বর্মা রাজবংশী তরুণদের ক্ষত্রিয়োচিত সাহস, বীরত্ব, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ও আত্মত্যাগের শিক্ষা এবং পরীক্ষায় উত্তির্ন হওয়ার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগদানের উৎসাহিত করেছিলেন। এর মাধ্যমে বৃহৎ জগতের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটেছিলো। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে স্বীয় সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতির আঙ্গিনায়, আইনসভার ভিতরে ও বাইরে তাঁর যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক স্বীকৃতি তিনি পেয়েছিলেন। পিছিয়ে পড়া স্বীয় সমাজকে টেনে তোলার জন্য আমৃত্যু তিনি কর্তবনিষ্ঠে থেকে সমাজের উদাহরণ সৃষ্ঠি করেছিলেন। ক্ষত্রীয় সমাজের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রেরণা তিনি। আজ শিক্ষা ও জীবিকা সহ সর্বক্ষেত্রে ক্ষত্রিয় সমাজের যে অগ্রগতি, তার মুলে পঞ্চানন বর্মার কর্মকান্ড ও প্রেরণা রয়েছে।





শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ন্যূনতম চাহিদা দিকে নজর না দিয়ে শুধু সংরক্ষণে সমস্যা মিটবে কি?



শুধুমাত্র "কাস্ট বেসড রিজার্ভেশন" করে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর পরিপূর্ণ উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। মানুষের নুন্নতম স্বাভাবিক ও প্রাথমিক চাহিদাগুলো আগে পূরণ করতে হবে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভারতে বিরাট সংখ্যক মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চরম দারিদ্রে জীবনযাপন করছেন। বেকারত্ব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। অর্থণৈতিক বৃদ্ধির সুফল সমাজের নিচের তলায় পৌঁছায় না। শুধুমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি অথবা বিশ্বয়ান-শিল্পায়নকে এগিয়ে নিলে দেশের সব মানুষের উন্নয়ন সম্ভব হয় না। সমাজের একটি বড়ো অংশ-মূলধারার অর্থনৈতিক কার্যক্রম তথা বাজার অর্থনৈতিক শরিক হয়ে উঠতে পারেনি। লিঙ্গবৈশিম্য আজও চরম ভাবে উপস্থিত। মানুষ জীবিকার তাগিদে গ্রাম থেকে শহরের দিকে ছুটে চলেছেন। বস্তিতে ভিড় বাড়ছে, অজস্র মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। মানবপাচার ও দেহব্যবসার পরিধি ভয়াবহভাবে রূপ পরিগণিত। অর্থনীতির বেহাল অবস্থার ভয়াবহ প্রভাবে বহু মধ্যবিত্ত পরিবার নিম্নমধ্যবিত্তে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ভয়াবহরূপ আমরা দেখেছি, সেই ভিড় আবারও হয়তো আমরা দেখবো। তবে এবার দেখবো মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিণত হয়ে ওঠা মানুষের ভিড়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া। বেসরকারি সংস্থাগুলা ভয়াবহভাবে কর্মিসংকোচন করে চলেছে। সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ মারাত্মক ভাবে কমেছে। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সংকটে, কুটিরশিল্প কঠিন পরিস্থিতি।

ভারতে প্রায় ৭০ ভাগ ভৌগোলিক এলাকা গ্রামীণ, অথচ সেখানে কৃষির অবস্থা বেহাল। তামিলনাড়ুতে কিছু কৃষক যখন তাঁদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য সরকারের সাহায্য চেয়ে অনশন করছিলেন। তখন ভারতের মিডিয়া ভোট নিয়ে ব্যস্ত ছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে যতটা পরিপূর্ণ দেওয়া হয়েছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে সেভাবে পরিপূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা হয় নি। যার ফল আমরা দেখেছি, চিনে ড্যাং শিয়াও পিংয়ের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উদারীকরণের তাংপর্যপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরবর্তীতে চিনে দরিদ্রসীমা ও বেকারত্ব দেখা গিয়েছিল। অপরদিকে, চিলিতে সাতের দশকে অর্থনৈতিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। অগাস্টো পিনোশেটের পরবর্তীতে অন্তর্জাতিক অর্থনৈতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে দেশের মূল সমস্যা অবহেলিত থেকে গিয়েছিলো। ঠিক যেভাবে চিনে ব্যক্তিপিছু আয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও দরিদ্র চরম আকার নিয়েছিল, সেভাবেই চিলি যেসময় দক্ষিণ আমেরিকার বাকি দেশগুলোর মধ্যে জিডিপি বৃদ্ধির নিরিখে সেরা ছিল, ঠিক সেই সময় চিলির বাস্তব সামাজিক ও অর্থনৈতিক ছবিটি আলাদা ছিল। আমি মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতির বিরোধিতা করছি না। তবে এই নীতিকে অনুসরণ করার সঙ্গে মূল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর পরিপূর্ণ সমাধান দরকার।

সবশেষে বলি, "কাস্ট বেসড রিজার্ভেশন" শুধুমাত্র প্রারম্ভিক দশ বছরের জন্য রাখার পক্ষপাতী ছিলেন আম্বেদকর। শুধুমাত্র কাস্টের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক, শিক্ষা তথা চাকরি পাওয়ার জন্য বিশেষ সুবিধার অধিকার আর যাই হোক যুক্তিযুক্ত নয়। শুধুমাত্র উচ্চবর্ণীয় হওয়ার কারণে কাউকে হাজার টাকা ফি দিয়ে চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে হবে? আর একটি বিশেষ শ্রেণির জন্য ২৫০ টাকা ফি-র সুযোগ যুক্তিহীন। মেরিট লিস্ট তৈরি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এই বৈষ্যম। একজন পঞ্চাশ নম্বর পেলেই পরীক্ষায় বসার যোগ্য, আরেকজনের জন্য ৫৫ শতাংশ। তার মানে স্বাধীনতার এত বছর পরও নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণি খাতায়-কলমে পিছিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বহু সমাজবিজ্ঞানী এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পথে পরিযায়ী শ্রমিকের যে ভিড় দেখেছি, তাঁরা নিম্নবর্ণের কিনা, সেই তথ্য আমাদের দরকার নেই। ওঁরা এই স্বাধীন দেশের পরাধীন মানুষ। 


শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মহামারি বোঝাল সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা জরুরি



শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম মহামারির চেহারা নিয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এই বিপর্যয় আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও একবার জনসমক্ষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। একদিকে দেখা যাচ্ছে, দেশের হাসপাতালের ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্য বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের আওতায়। অন্যদিকে, দেশের চিকিৎসকদের প্রায় ৮০ শতাংশ এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। অথচ করোনা সংক্রামণের মতো জরুরি পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা অতি নগণ্য। অধিকাংশ বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কার্যত হাত গুটিয়ে বসে। যে গুটিকয়েক বেসরকারি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসা করছে, তাদের খরচ সাধারণ মধ্যবিত্তের ধরাছোয়ার বাইরে। এমতাবস্থায় দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রাগুলি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে এই মহামারির বিরুদ্ধে একা কুম্ভের মতন লড়ে যাচ্ছে। মহারাষ্টের ৮২ শতাংশ মানুষের বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসা করছে সরকারি হাসপাতালগুলি। যে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে উচ্চবিত্তরা অবজ্ঞার চোখে দেখতেন, কোনওদিন ধাতর্বের মধ্যে আনতেন না। এই মহামারির পরিস্থিতিতে তাঁরাও আবার উপলব্ধি করছেন, গণস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে রাষ্টের ভূমিকা ও সুদীর্ঘ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোম নগরী যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, তেমনি ভারতের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রাতারাতি এই জায়গায় পৌঁছোয়নি। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলি একবার ফিরে দেখা যাক। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলতে মূলত ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বাইয়ের মতো বিভিন্ন বাণিজ্যনগরী এবং দার্জিলিংয়ের মতো কিছু শৈল শহরে ইংরেজ কর্মচারী, সেনাবাহিনী এবং দেশীয় জমিদারের পরিবার পরিজনদের চিকিৎসার জন্য তৈরি কিছু হাসপাতাল। যদিও কিছু মিশনারি সংস্থা জনসাধারণের জন্য কিছু দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছিলো। কিন্তু সারা ভারতে সেগুলির সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। আসলে বাংলার নবজাগরণের সময় থেকে ব্রাহ্মসমাজ এবং অন্যান প্রগতিশীল মানুষজনের উদ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে প্রাশ্চ্যাত চিকিৎসা ব্যবস্থা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে। ভারতীয়রাও ডাক্তারি পড়তে শুরু করেন, যদিও সেই প্রবণতা শহরে বিত্তশালী উচ্চবংশীয় পরিবারের পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে দিকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেড়াজাল ভেঙে কাদম্ব কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দীবাঈ জোশি, হৈমবতী সেনের মতো কিছু সম্ভ্ৰান্ত পরিবারের মহিলা পুরুষ প্রভাবিত ডাক্তারি দুনিয়ায় সফলভাবে পদার্পন করেছিলেন।

তখন দলিত ও আদিবাসী সমাজের ছেলে মেয়েদের পক্ষে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ হয়নি। চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামাঞ্চলে মানুষ মূলত বৈদ্য-হাকিম-ওঝাদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ইংরেজ শাসকদের অনুকূল্যে ভারতীয় উপমহাদেশের আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধা, হাকিম ইত্যাদি চিকিৎসা পদ্ধতি ততদিনে ইউরোপীয় আধুনিক আলোপ্যাথি চিকিৎসার কাছে কৌলিন্য হারিয়েছে। বর্তমান সময়েও যে সেই পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটেছে, তা বলা যাবে না। আজও চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটাই শহরকেন্দ্রিক ও পুরুষশাসিত। স্বাধীন ভারতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার পথচলা শুরুহয়ে ভোরে কমিটির হাত ধরে। জোসেফ উইলিয়াম ভোরে'র নেতৃত্বে এই কমিটি ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার এক পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেয়, যা স্বাধীন ভারতের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার রূপরেখাটি তৈরী করে দিয়েছিলেন। এই কমিটির সদস্যদের অন্যতম ছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়, যিনি পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমীক্ষা করে এই কমিটি ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার করুন দশার পাশাপাশি অপুষ্টি, চরম দরিদ্র, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্য-শিক্ষার অভাব, বসবাসের অনুপযুক্ত বাড়িঘর, সৌচাগার এবং নিকাশি ব্যবস্থার অপ্রতুলতা তথা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস ইত্যাদিকে ভারতীয়দের স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।

প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলতে শুধুমাত্র রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা ও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরী ইত্যাদি বোঝায় না। অর্থাৎ শুধু চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি করলেই স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। পূর্বে উল্লেখিত আর্থসামাজিক সমস্যাগুলির দিকে বিশেষ নজর দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। এই সোমবার সমাধান করলে শিশু ও মাতৃকালীন উচ্চ মৃত্যুহার, বিভিন্ন মহামারি রোধের পাশাপাশি জনসাধারণের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিবিধান সম্ভব। উন্নতি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ম্যালেরিয়া বা ডায়েরিয়ার মতো রজার চিকিৎসায় রাষ্ট্রকে হাসপাতাল তৈরির পাশপাশি এই রোগগুলি দমনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যেমন নিয়মিত জঙ্গল-জঞ্জাল পরিষ্কার এবং জনস্বাস্থ্য পরিশ্রুত পানীয়জল সরবরাহ ইত্যাদি সুনিশ্চিত করতে হবে। সাত দশক পেরিয়ে গেলেও ভোরে কমিটির মতো এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সহ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের জুড়ি মেলা ভার ভারতবর্ষে। অথচ বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেও এই কমিটির সুপারিশ সমান প্রাসঙ্গিক।

স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সম্পূর্ণ সরকার পোষিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলো ভোরে কমিটি। এই কমিটির একটি কালজয়ী প্রস্তাব 'সবার জন্য স্বাস্থ্য'। অর্থাৎ ধনী, গরিব নির্বিশেষে সমস্ত জনগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবে রাষ্ট্র। ন্যায় এবং সাম্যের আদর্শে চিকিৎসা ব্যবস্থা হবে সার্বজনীন। দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রাগুলিকে তিনটি স্তরে ভাগ করে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরে বিশেষ্যত গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রাগুলিকে সমৃদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলো এই কমিটি। এই তিনটি স্তরের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য ফেডারেল ব্যবস্থার প্রস্তাব ছিল কমিটির রিপোর্টে। জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ভারত সরকার উপলব্ধি করেছিল, গনচিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা হল কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাজ। কাজেই একে ঢেলে সাজানো জরুরি। ভোরে কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথম এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চিকিৎসা পরিকাঠামো যেমন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি সৃষ্টিতে এবং মানবসম্পদ যেমন চিকিৎসক, নার্স, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী তৈরিতে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ম্যালেরিয়া দমন, মাতৃকালীন মৃত্যু এবং শিশুমৃত্যু রোধের পাশাপাশি পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা এবং সৌচালয় তৈরিতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। এরপরও বিভিন্ন সময়ে গঠিত অন্যান্য কমিটি যেমন মুদালিয়ার কমিটি (১৯৬২), চাড্ডা কমিটি (১৯৬৩), কাতার সিংহ কমিটি (১৯৭৪), শ্রীবাস্তব কমিটি (১৯৭৫) কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যেমন মাল্টিপারপাস হেলথ ওয়ার্কার্স পদ সৃষ্টি, চিকিৎসা শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষন ইত্যাদি করেছিল। এতে ভারতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা মজবুত হতে শুরু করেছিল। এছাড়া বেশকিছু আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং সংস্থা ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলো। ১৯৭৮ সালে সোভিয়েত উনিয়নের আলমা-আটা শহরে ভারত সহ বিশ্বের ১৩৮টি দেশ এক ঘোষণাপত্রে সাক্ষর করে যা "আলমা-আটা ডেক্লারেশন" নাম পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৎকালীন মহাপরিচালক হাফদান মাহলার এই সম্মেলনের আয়োজন এবং আর রূপরেখা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি প্রাথিমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সুদীর্ঘ করতে এবং স্বাস্থ্যকে মানুষের অধিকার হিসাবে সুনিশ্চিত করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে "সবার জন্য স্বাস্থ্য" এই বৈপ্লবিক ঘোষণাটি করে। এই সম্মিলনের পর ভারত সরকার ১৯৮৩ সালে প্রথম জাতীয় স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করে, যাতে আলমা-আটা ঘোষণার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল।

ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোনোদিনই পুরোপুরি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত ছিল না। সরকারি সাস্থ্যব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্লিনিক, প্রাইভেট প্র্যাকটিস ইত্যাদির প্রচলন শুরু থেকেই ছিল। তবে গত শতাব্দীর নয়ের দশকে ভারতীয় অর্হনীতির উদারনীতিকরণ এবং বিশ্বায়নের ধাক্কায় অন্যান ক্ষেত্রের মতো চিকিৎসা ব্যবস্তাতেও বাণিজ্যকরণের পথকে সুগম করে দিয়েছিলো। এই সময় থেকে ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দেশি-বিদেশী বেসরকারি সংস্থার প্রভাব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রাজনৈতিক প্রভাব এবং অর্থনৈতিক প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদেশফেরত বেশ কিছু চিকিৎসক বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কিছু শহরে কর্পোরেট স্টাইলে বিলাসবহুল হাসপাতাল খুলে বসেন। ক্রমশ এই হাসপাতালগুলির শাখা সারা ভারতে ছড়িয়ে পরে। এই সময় ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি কম পয়সায় প্রাণদায়ী ওষুধ তৈরী এবং বিক্রি করে প্রায় সারা বাজার দখল করে নেওয়ার উপক্রম করেছিল। কিন্তু "ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস" সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির কল্যানে ভারতের দেশীয় বাজারেই ওষুধের দাম এখন আকাশছোঁয়া। ছোট্ট শহরগুলিয়েও ছোট-বড় নানা ধরণের নার্সিংহোম, প্রাইভেট ক্লিনিক ইত্যাদি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে, নানাভাবে মধ্যবিত্ত মননে এই ধারণাকে সুদীর্ঘ করা হয়েছে যে, সরকারি প্রতিষ্টান মানে সেখানে যথাযথ  পরিষেবা পাওয়া যায় না। এই বিশাল আঁতাত বিভিন্ন রকম প্রচার করে সাধারণ জনতাকে সরকারি হাসপাতাল থেকে নার্সিংহোমমুখী হতে বাধ্য করেছে। "আয়ুষ্মান ভারত" নিয়ে যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হোক না কেন, আসলে এই বিমা নির্ভর প্রকল্প স্বাস্থ্যব্যবস্থার পথকে সুগম করেছে। যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সরকার এই বিমার প্রিমিয়াম দিচ্ছে, সেই টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলির চেহারা এবং পরিকাঠামো, দুই পাল্টে দেওয়া যেত। ২০০৫ সালে প্রবর্তিত ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন (এনআরএইচএম) এর হাত ধরে এই চেষ্টা একবার শুরু হয়েছিল বটে। এই মিশন সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় প্রভূত উন্নতির পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন এবং শিশুর মৃত্যুহার কমানোয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনে নিযুক্ত আশাকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টার কথা আলাদা করে বলতেই হবে। এই আশাকর্মী, অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ (এএনএম) এবং কমিউনিটি হেলথ অফিসার (সিএইচও) প্রমুখ স্বাস্থ্যকর্মীই এখন দেশের প্রতিটি গ্রামে করোনা মহামারীর সঙ্গে যুদ্ধে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন।

এই মহামারি পরিস্থিতি আবার আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সরকারি হাসপাতাল এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। বেসরকারি হাসপাতালগুলি শুধুমাত্র "ক্লিনিকাল হেলথ" এবং "কিউরেটিভ কেয়ার" পরিষেবা দিতে আগ্রহী। কারণ, জনস্বাস্থ্য হল জনসম্পদ, অর্থনীতির ধ্রুপদী নিয়মানুযায়ী যেখানে মুনাফা অর্জনের সুযোগ কম। কাজেই বৈপ্লবিক ঘোষণা "সবার জন্য স্বাস্থ্য" নিয়ে আরও একবার ভাবার সময় এসেছে। সময় এসেছে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে ফিরে তাকানোর।






















স্যানিটাইজার আসল নাকি নকল? নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন


আসল থেকে নকল ছেয়ে গেছে বাজারে। নিজের স্যানিটাইজার নিজেই পরীক্ষা করে নিতে শিখুন। কিন্তু কিভাবে? বাজারে এখন অসংখ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার। প্রতিটির গায়ে লেখা আছে ৭০ শতাংশ এলকোহল। কিন্তু সত্যি কি তাই? সব স্যানিটাইজার আসল? না। তাহলে কিভাবে চিনবেন কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার সবচেয়ে নিরাপদ কার্যকারী বা খাঁটি। আসুন জেনে নেওয়া যাক তিনটি ঘরোয়া উপায়ে।

১. একটি পাত্রে সামান্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে সেটি শুকোনোর চেষ্টা করুন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শুকিয়ে গেলে ওই হ্যান্ড স্যানিটাইজার খাঁটি। নকল বা এলকোহলের মাত্রা কম হলে সেটি শুকোতে সময় লাগবে বেশি।

২. টিস্যু পেপারে কলমের দাগ দিয়ে ওই দাগের উপর কয়েক ফোটা স্যানিটাইজার ঢালুন, পেনের কালি দ্রুত টিশু পেপারে ছড়িয়ে গেলে বুঝতে হবে ওই স্যানিটাইজার নকল বা এতে এলকোহলের মাত্রা অনেক কম। টিশু পেপারে কালি না ছড়িয়ে সেটি মুহূর্তে শুকিয়ে গেলে বুঝতে হবে, তা অত্যন্ত কার্যকরী।

৩. একটি ছোট পাত্রে সামান্য ময়দা নিয়ে তাতে কিছুটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে মাখতে শুরু করুন, ময়দা দলা পাকিয়ে গেলে বুঝতে হবে ওই স্যানিটাইজার নকল বা এতে এলকোহলের মাত্রা অনেক কম। খাঁটি স্যানিটাইজার ক্ষেত্রে এমনটি হবে না।


বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মেয়েদের যেসব প্রশ্ন করতে পাগল ছেলেরা




সম্পর্ক এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অন্যের বিষয়ে কতকিছুই না জানতে চান। বিশেষ করে প্রেমিকার মনে হাজারো-লক্ষ প্রশ্ন লুকিয়ে থাকে। এখানে দেখে নিন এমনি কিছু প্রশ্ন, যা প্রায় প্রতিটি ছেলেই তার প্রেমিকা বা পরিচিত মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করতে চান। কিন্তু করেন না অথবা প্রশ্ন না করে নিজেরাই তা বোঝার চেষ্টা করেন।

১. তুমি আমার সব বিষয়ে এত কিছু জানতে চাও কেন?
মূলত প্রেমিকারা, প্রেমিকের সব বিষয়ে নাক গলাতে চায়, যা কিছু ছেলেরা সাধারণত চায় না।

২. তোমার প্রিয় কুকুর-বিড়ালের জন্মদিন মনে রাখতে হবে কেন?
মেয়েরা প্রতিটি বিশেষ দিন-তারিখ পরিষ্কার মনে রাখতে পারেন। প্রেমিকার জন্মদিনও ভুলে যান অনেক প্রেমিক। সেখানে তার প্রিয় কুকুরের জন্মদিনের কথা মনে রাখাটা গুরুদায়িত্বে পরে না বলেই মনে করেন পুরুষরা।

৩. আমার সঙ্গে ও আবারও কথা বলতে চাইছে কেন?
সাধারণত ছেলেরা এই বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন। তাদের প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ড পুনরায় সম্পর্ক তৈরির জন্য অনেক সময় প্যাঁচ-পয়জার কষেন। তার ফলে প্রশ্নটি ঘুরপাক খায় মনের মধ্যে।

৪. বন্ধুদের সঙ্গে আমার আড্ডা মেনে নিতে চাও না কেন?
ছেলেরা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে চায়। কিন্তু প্রেমিকা তা মেনে নিতে নারাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।

৫. তোমার ওই বান্ধবীরদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দাও না কেন?
এই প্রশ্নটি ছেলেদের মনে ভীষণভাবে ঘুরপাক খায়। কিন্তু তা প্রশ্নের আকারে প্রেমিকার কাছে তুলে ধরা বেশ বিপজ্জনক।

৬. আকর্ষণীয় নারীর সঙ্গে কি ধরণের আচরণ করতে হয়?
এই মেয়েরাই সবচেয়ে ভালো বলতে পারেন। কিন্তু তা কখনও প্রেমিককে বলেন না। আর ছেলেরাও তা জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারেন না।

৭. ছেলেদের দেহের কোন অংশ মেয়েদের কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়?
সব ছেলেই এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়। কিন্তু জিজ্ঞাসা করার সাহস কিছুতেই পায় না।

৮. ছেলেদের পরিপাটি হয়ে থাকার বিষয়টি মেয়েরা কি চোখে দেখেন?
এই প্রশ্নের উত্তর কোনও প্রেমিকাই দিতে চাইবে না। ছেলেদের তা বুঝে নিতে হবে।

৯. অন্তরঙ্গ সময়কে আরও রোমাঞ্চকর করা যায় কিভাবে?
বিষয়টি নিয়ে ভীষণ ভাবে কথা বলতে চান ছেলেরা। কিন্তু তা কখনও মুখে প্রকাশ করতে পারেন না।

১০. কোনও মেয়ে মোবাইল নম্বর দিলে ঠিক কত সময় পর তাকে ফোন করা উচিত?
এই প্রশ্নটি বেশ চিন্তায় ফেলে ছেলেদের। কিন্তু প্রেমিকার কাছে জানতে চাইতেও পারেন না।

১১. প্রথম ডেটিংয়ে একই মেয়ের মন জয় করতে গেলে ঠিক কি কি করতে হয়?
যেহেতু বর্তমান প্রেমিকাকে ছেড়ে নতুন প্রেম করতে চাইছেন না। কাজেই এ প্রশ্ন প্রেমিকার কাছে তোলা বেশ বিপজ্জনক। কিন্তু সব ছেলেই তা জানতে চায়।

১২. তুমি কি আমাকে বন্ধু ভাবো নাকি অন্যকিছু?
কোনও মেয়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠার পর ছেলেদের মনে এই প্রশ্নটি জেগেই। কিন্তু কখনও মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না।

১৩. তোমাকে খুশি করতে আমার কোন কোন কাজের কোনও অর্থ খুঁজে পাও না তুমি?
ছেলেরা মেয়েদের খুশি করতে অনেক কিছু পারেন। কিন্তু আর মধ্যে বেশ কিছু কাজ করে কোনও লাভ হয় না। সেই কাজগুলো কি কি, তার ফিরিস্তি জানতে চান না মেয়েরা।

১৪. সবসময় সন্তান নিতে চাও কেন?
বিয়ের পর বা বিয়ের পরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা এ কথাটি বলতে চান পুরুষরা। কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে বলে তা আর বলতে পারেন না।

১৫. সব কাজে এত সময় নষ্ট করো কেন তুমি?
সাজগোজে মেয়েরা প্রচুর সময় ব্যয় করেন। এ বিষয়ে ছেলেরা অস্থির হয়ে পড়লেও সেভাবে অভিযোগ করে উঠতে পারেন না। কারণ তারা জানেন যে, বিষয়টি সহজাত।



গলা ভেজাতে ঘরোয়া রেসিপি চা

চিকিৎসকরা বারবার গরম পানীয়চা খেলেই যে করোনা নির্মূল হবে এমনটা নয়। তবে করোনার পরিবেশে ঘরোয়া চা গলা ভেজানোর জন্য উপযুক্ত সময় এই সুযোগে কিছু রেসিপির চা চাখা হয়ে যাবে।


মশলা চা


কি কি লাগবে :-

ছোটো এলাচ ৫ টি, দারুচিনি ১ টুকরো, চিনি স্বাদমতো, দুধ ১ চাপ, গোলমরিচ ১ টি, লবঙ্গ ৪ টি, চা পাতা ২ চা চামচ, আদা মিহি করে কাটা কয়েক টুকরো।

কিভাবে করবেন :-

এলাচের খোসা ফেলে ভিতরের মসলা বের করে নিন। সব মসলা একসঙ্গে গুঁড়ো করে ফেলুন মিহি করে। প্যানে ৪ কাপ জল গরম করে চা পাতা দিন। চাইলে আধা চা চামচ গ্রীন টি পাতাও দিতে পারেন ব্ল্যাক চায়ের সঙ্গে। আবার গুঁড়ো করে রাখা মশলা আর চিনি দিন। দুধ ও আদা গুঁড়ো দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। নামানোর আগে আদা কুচি করে অল্প জ্বালে মিনিট কয়েক রেখে দিন, তারপর নামিয়ে নিন। হয়েগেলো মশলা চা।




মধু, লেবু আদা চা


কি কি লাগবে :-

২ কাপ জল, ছোটো ১ চামচ আদা মিহি করে কুচোনো, চা পাতা ছোটো ২ চামচ, ছোট এক চামচ পাতিলেবুর রস, ছোটো এক চামচ মধু,

কিভাবে করবেন :- 

একটি প্যানে ২ কাপ জল গরম করতে বসান, ফোটার খানিক আগে মিহি করে কুচো আদা দিন। জল ফুটতে শুরু করলে চা পাতা দিন। মনে রাখবেন, প্রতি কাপ চায়ের জন্য এক চামচ চা পাতা দেবেন। এরপর আগুন নিভিয়ে ওতে পাতিলেবুর রস ও মধু দিন। চা পাতা ছেঁকে কাপে ঢেলে সকালবেলা যদি খান দেখবেন ক্লান্তি, ঘুম সব একসঙ্গে পালিয়েছে। তাছাড়া স্ট্রেসে যখন থাকবেন এটি বানিয়ে খাবেন, ম্যাজিকের মতো উপকার পাবেন।


মালাই এলাচি চা


কি কি লাগবে :-

দুই কাপ চায়ের জন্য দুধ দেড় কাপ, আধ কাপ জল, মালাই বা ক্রিম ৪ চামচ, ১ টি এলাচ, ১ টি লবঙ্গ, ২ চামচ চা পাতা, ৩ চামচ চিনি।

কিভাবে করবেন :-

একটি সসপ্যানে কম আঁচে দুধ ধোন করতে বসান, সামান্য ঘনো হয়ে এলে এলাচ ও লবঙ্গ থেঁতে দিন। আবার দুধ ফুটে এলে ওতে জল ও চা পাতা দিন। আপনার মালাই এলাচি চা তৈরি। এবার ছেঁকে নিয়ে কাপে ঢেলে পরিবেশন করুন।



তন্দুরি চা


কি কি লাগবে :-

এক কাপ ঘন দুধ, জল দেড় কাপ, ২ চা চামচ চা পাতা, ২-৩ টি পুদিনা পাতা, ২ টি লেবুপাতা, ২ চিমটে চা মশলা, স্বাধমতো চিনি, ২ টি মাটির ভাঁড়।

কিভাবে বানাবেন :-

মাটির ভাঁড় দুটো আগুনের আঁচে মিনিট দশেক পুড়িয়ে নিন। একটি পাত্রে দুধ খুব ভালো করে ফুটিয়ে নামিয়ে রাখুন। অন্য একটি পাত্রে জল ফুটিয়ে তাতে একে একে চিনি, পুদিনা পাতা, লেবুপাতা, চায়ের মশলা, চা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর ঘন করে ফুটিয়ে রাখা দুধ দিয়ে আরো কিছুক্ষন ফুটিয়ে নিন। একটি বড়ো পাত্রের মধ্যে পুড়িয়ে রাখা মাটির ভাড়ঁ দুটো রেখে তাতে চা ছেঁকে ঢেলে দিন, হয়ে গেলো তন্দুরি চা।







বিরোধিতা মানে শুধু অন্ধ বিরোধিতা নয়

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাস আর দাম যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে যার প্রভাব দেশের জনগণের সঙ...