শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ন্যূনতম চাহিদা দিকে নজর না দিয়ে শুধু সংরক্ষণে সমস্যা মিটবে কি?



শুধুমাত্র "কাস্ট বেসড রিজার্ভেশন" করে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর পরিপূর্ণ উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। মানুষের নুন্নতম স্বাভাবিক ও প্রাথমিক চাহিদাগুলো আগে পূরণ করতে হবে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও ভারতে বিরাট সংখ্যক মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চরম দারিদ্রে জীবনযাপন করছেন। বেকারত্ব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। অর্থণৈতিক বৃদ্ধির সুফল সমাজের নিচের তলায় পৌঁছায় না। শুধুমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি অথবা বিশ্বয়ান-শিল্পায়নকে এগিয়ে নিলে দেশের সব মানুষের উন্নয়ন সম্ভব হয় না। সমাজের একটি বড়ো অংশ-মূলধারার অর্থনৈতিক কার্যক্রম তথা বাজার অর্থনৈতিক শরিক হয়ে উঠতে পারেনি। লিঙ্গবৈশিম্য আজও চরম ভাবে উপস্থিত। মানুষ জীবিকার তাগিদে গ্রাম থেকে শহরের দিকে ছুটে চলেছেন। বস্তিতে ভিড় বাড়ছে, অজস্র মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। মানবপাচার ও দেহব্যবসার পরিধি ভয়াবহভাবে রূপ পরিগণিত। অর্থনীতির বেহাল অবস্থার ভয়াবহ প্রভাবে বহু মধ্যবিত্ত পরিবার নিম্নমধ্যবিত্তে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ভয়াবহরূপ আমরা দেখেছি, সেই ভিড় আবারও হয়তো আমরা দেখবো। তবে এবার দেখবো মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিণত হয়ে ওঠা মানুষের ভিড়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া। বেসরকারি সংস্থাগুলা ভয়াবহভাবে কর্মিসংকোচন করে চলেছে। সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ মারাত্মক ভাবে কমেছে। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সংকটে, কুটিরশিল্প কঠিন পরিস্থিতি।

ভারতে প্রায় ৭০ ভাগ ভৌগোলিক এলাকা গ্রামীণ, অথচ সেখানে কৃষির অবস্থা বেহাল। তামিলনাড়ুতে কিছু কৃষক যখন তাঁদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য সরকারের সাহায্য চেয়ে অনশন করছিলেন। তখন ভারতের মিডিয়া ভোট নিয়ে ব্যস্ত ছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে যতটা পরিপূর্ণ দেওয়া হয়েছে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে সেভাবে পরিপূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা হয় নি। যার ফল আমরা দেখেছি, চিনে ড্যাং শিয়াও পিংয়ের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উদারীকরণের তাংপর্যপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরবর্তীতে চিনে দরিদ্রসীমা ও বেকারত্ব দেখা গিয়েছিল। অপরদিকে, চিলিতে সাতের দশকে অর্থনৈতিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। অগাস্টো পিনোশেটের পরবর্তীতে অন্তর্জাতিক অর্থনৈতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে দেশের মূল সমস্যা অবহেলিত থেকে গিয়েছিলো। ঠিক যেভাবে চিনে ব্যক্তিপিছু আয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও দরিদ্র চরম আকার নিয়েছিল, সেভাবেই চিলি যেসময় দক্ষিণ আমেরিকার বাকি দেশগুলোর মধ্যে জিডিপি বৃদ্ধির নিরিখে সেরা ছিল, ঠিক সেই সময় চিলির বাস্তব সামাজিক ও অর্থনৈতিক ছবিটি আলাদা ছিল। আমি মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতির বিরোধিতা করছি না। তবে এই নীতিকে অনুসরণ করার সঙ্গে মূল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর পরিপূর্ণ সমাধান দরকার।

সবশেষে বলি, "কাস্ট বেসড রিজার্ভেশন" শুধুমাত্র প্রারম্ভিক দশ বছরের জন্য রাখার পক্ষপাতী ছিলেন আম্বেদকর। শুধুমাত্র কাস্টের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক, শিক্ষা তথা চাকরি পাওয়ার জন্য বিশেষ সুবিধার অধিকার আর যাই হোক যুক্তিযুক্ত নয়। শুধুমাত্র উচ্চবর্ণীয় হওয়ার কারণে কাউকে হাজার টাকা ফি দিয়ে চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে হবে? আর একটি বিশেষ শ্রেণির জন্য ২৫০ টাকা ফি-র সুযোগ যুক্তিহীন। মেরিট লিস্ট তৈরি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এই বৈষ্যম। একজন পঞ্চাশ নম্বর পেলেই পরীক্ষায় বসার যোগ্য, আরেকজনের জন্য ৫৫ শতাংশ। তার মানে স্বাধীনতার এত বছর পরও নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণি খাতায়-কলমে পিছিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বহু সমাজবিজ্ঞানী এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পথে পরিযায়ী শ্রমিকের যে ভিড় দেখেছি, তাঁরা নিম্নবর্ণের কিনা, সেই তথ্য আমাদের দরকার নেই। ওঁরা এই স্বাধীন দেশের পরাধীন মানুষ। 


বিরোধিতা মানে শুধু অন্ধ বিরোধিতা নয়

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাস আর দাম যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে যার প্রভাব দেশের জনগণের সঙ...