জীবনযাপনের চলচিত্রটা হটাৎ কেমন যেন বদলে গিয়েছে। ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়েছে একরাশ টেনশন, আতঙ্ক এমনকি মৃত্যু ভয় পর্যন্ত।অজানা মরণভয় নিয়ে প্রতিদিনের মরণভয়। আর ভালো লাগছে না। আমাদের বোর্ডের এই অবস্থা, শিশুদের কথা একবার ভাবুন তো ? নতুন ক্লাসে উঠেছে অথচ সচলে যাওয়া নেই। নেই একসঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার মজা, নতুন বইয়ের গন্ধ, নতুন স্কুল, ইউনিফর্ম কিছুই নেই। এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদেরই বেশি কষ্ট হচ্ছে। কোভিদ-১৯, লকডাউন-শব্ধগুলি সব শিশুদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওদের জানা নেই এসবের মানে ও গুরুত্ব। তাই শিশুমনে অজানা ভয় ও দ্বন্ধ জন্ম নিয়েছে। এর জন্য দায়ী কিন্তু আমরা, অভিভাবকরা। যেহেতু শিশুরা আমাদের অনুসরণ করে, আমাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা খেয়াল করে, তাই আমরা যদি অজানা ভবিষৎ নিয়ে শংকিত হতে থাকি তা শিশুমনের উপর অসম্ভব চাপ তৈরী করে। এই কারণে আমাদের খুব সচেতন থাকতে হবে, বিশেষ করে ২-৫ বছর বয়সী শিশুদের অভিভাবকদের।মনে রাখতে হবে একজোড়া চোখ সবসময় আমাদের অনুসরণ করছে, তাই আচার-ব্যবহার-কথাবার্তার সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এমন কিছু ওদের সামনে আমাদের আলোচনা ভুল বার্তা পৌঁছায়। সবসময় ওদের মানসিক অবস্থার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা জানি ২-৫ বছর সময়টা শিশুদের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোবিদদের মতে. এই সময়ে শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্পূর্ণ হয়। তাই ওদের সামনে সবসময় যেন সঠিক উধাহরন থাকে। এই সময় শারীরিক মানসিক বিকাশের সঙ্গে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওদের সামাজিককরণ ও সোশ্যালাইজেশন।বাড়ির পরিবেশ ছাড়া স্কুল ও খেলার মাঠ এই সামাজিকীকরণের পক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেখানে বিভিন্ন ধরণের শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা ও ভাবের আদানপ্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের সামাজিকীকরণের প্রথম পাঠ। সে সুযোক আজ হটাৎ করে চার দেওয়ালের মাঝে আবদ্ধ।তাই ওদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। ওদের ভালো লাগা, খারাপ লাগাগুলো যেন আমাদের নজর এড়িয়ে না যায়। মানসিক চাপ, ভয়, টেনশন প্রকাশ করার ক্ষমতা ওদের তৈরী হয়নি। তাই োর যাতে প্রতিদিন খুশিতে-আনন্দে কাটাতে পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
কি কি করবেন :-
- মা-বাবা সবাই একসঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান।
- কিছু গেম খেলার পরিকল্পনা করুন এবং একসঙ্গে খেলুন।
- ঘরের কিছু কাজে ওদের সামিল করুন। যেমন, ছোটোখাটো চেয়ার-টেবিল পরিষ্কার করা, জিনিস গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি।
- ছবি আঁকা, রং-করা, ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে কিছু বানানো ইত্যাদি কাজে ওদের উৎসাহিত করুন এবং প্রশংসা করুন।
- একসঙ্গে শুয়ে গল্প বলুন কিংবা গণ্য পরে শোনান। বিভিন্ন রূপকথার গল্প, নীতিগল্প, মহাপুরুষের জীবনী পরে শোনান।
- ওদের পছন্দমতো খাবার যেমন, কেক, পুডিং, চাউমিন ইত্যাদি একসঙ্গে তৈরী করুন।
- পুরানো দিনের অ্যালবাম একঙ্গে ছবি দেখুন।
- একসঙ্গে ফুল গাছ লাগানো, পরিচর্যা করুন। রোজ ওদের দিয়ে গাছে জল দেওয়ান।
- সকাল-সন্ধ্যা সময় বের করে একসঙ্গে প্রার্থনা ও কোণও মন্ত্র উচ্চারণ করুন। এছাড়া ব্যায়াম, মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস, ডিপ ব্রিডিং যদি করতে পারেন। এতে মনের ক্লান্তি দূর হবে। মনে রাখবেন, এগুলোই মেডিটেশনের প্রথম পাঠ।
- ছাদে বা খোলা জায়গায় খেলার সুযোগ থাকলে সাইকেল চালানো, দৌড়াদৌড়ি, কানামাছি খেলা ইত্যাদি খেলা যেতে পারে।
- পড়াশোনার বিষয় গুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নানারকম গেম প্ল্যান করুন। কখনো কখনো নিজে পড়ুয়া হয়ে ওদের পড়াতে বলুন।
- সবাই কসঙ্গে খাওয়া, ঘুমানো ইত্যাদি ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুন এবং আপনার শিশুকেও সেখান।
- আমরা যেমন মাঝে মাঝে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এর সঙ্গে কথা বলি, শিশুদেরও ওদের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ফোন কথা বলার বা ভিডিওকলের মাধ্যমে বন্ধুদের দেখার সুযোগ করে দিতে হবে।
- শিশুর বয়স এবং মানসিক স্তর অনুযায়ী করোনা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিতে হবে।
- বলা বাহুল্য ওদের নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, স্বাস্থবিধি মেনে চলার পথ দিতে হবে এবং সেইসব নিয়মিত মেনে চলা অভ্যাস করতে হবে।
কি কি করবেন না :-
- মাঝে মাঝে টিভি খুলে করণের আপডেট দেখাবেন না, বিশেষ করে শিশুর সামনে।
- খবরের কাগজে পড়ে কোনো নেতিবাচক আলোচনা শিশুদের সামনে করবেন না।
- অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, আর ঢেউ যেন ওদের মনে না ছোঁয়। অতএব, এই সংক্রন্ত কোনও আলোচনা ওদের সামনে করা চলবে না।
- ঘরবন্দি মুহূর্তে অনেক সময় আপনজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, মন কষাকষি হওয়া খুব স্বভাবিক ,কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন শিশুদের সামনে সংযত থাকি।
- বেশিক্ষন টিভি, মোবাইল ইত্যাদি দেখার সুযোগ দেবেন না।