শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

শকুনের মতো ওঁৎ পেতে রয়েছে

বাবাজী কা ঠুল্লু

১৯৪৭ সালে ভারতের মোট জিডিপির এক/তৃতীয়াংশ ছিল এবং ভারতের সমগ্র শিল্প উৎপাদনে ৩০% ছিল। আজ, জিডিপির শেয়ারটির নিচে নেমে এসেছে এবং শিল্প উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৫% আমি কমিউনিস্টদের জিজ্ঞেস করতে চাই...কে এর জন্য দায়ী? ৬৫০০০ কল-কারখানা তালা ঝুলানো সিপিএমের কাছে কোন জবাব আছে? সিপিএম এর ট্যাকটিস - আসল প্ল্যান - অর্থনীতি ধ্বংস, আজ কাজ চাই, জিডিপি দিন-দিন কমে যাচ্ছে...পরেরদিন রাস্তা...ব্যবসা বন্ধ করো...ধর্মঘট করো - (উদাহরণ গত বছরে ই-আমাজন, স্টারলাইট, উইনস্ট্রোম, জিও ইত্যাদি তে) রাস্তায় চিল্লাবে কাজ চাই.... ১৯৬৫- সিপিএমের জঙ্গি আন্দোলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গে ১৭৯ টি শিল্প ধর্মঘট ও ৪৯ টি শিল্প কারখানাতে লক-আউট হয়েছিল, ১৯৭০- সিপিএম এর জঙ্গি আন্দোলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গে ৬৭৮ টি শিল্প ধর্মঘট ও ১২৮ টি শিল্প কারখানাতে লক আউট হয়েছিল। ১৯৬৫ এ পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্টদের যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেই সার্কুলার জারি করলো যে লেবার ডিপার্টমেন্টের পারমিশন ছাড়া পুলিশ কোনো শিল্প কারখানা ঘেরাও এ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না অর্থাৎ শিল্প-ধ্বংসকারী জঙ্গী কমিউনিস্ট শ্রমিক ইউনিয়ন গুলোর নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে করে দেওয়া হল, জ্যোতি বসুর ভাষায় শিল্পপতিরা হল শ্রেণীশত্রু এই জন্য তাঁদের উপর জ্যোতি বসুর কোন মায়া মমতা নেই, লোকটা আবার করদাতাদের টাকায় ক্যানাডা ইউকে গিয়েছিল উদ্যোগপতির খোঁজে। নিয়ে এসেছিলেন "বাবাজী কা ঠুল্লু"। 

জ্যোতি বসু শিল্প ধরতে যাচ্ছি নামে নামের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সরকারি টাকাতে ওর রাজত্বের প্রথম ১২ বছরে ২২ বার ইংল্যান্ড গেছিলো- পরে ধরা পরে যাওয়ায় আর যেত না। জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু বিস্কুট এর কারখানা খোলার কিছু আগে আগেই হঠাৎ করে কলকাতা তথা ভারতবর্ষের বাঙালি মলিকের দুইটি প্রখ্যাত বিস্কুট বানানোর কারখানা সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর দাপটে বন্ধ হয়ে যায়। কম্যুনিস্টরা সত্তরের দশকে ট্রাক্টর বিরোধিতা করেছিল, ৯০ এর দশকে কম্পিউটার এর বিরোধিতা করেছিল, এখন কৃষিবিলের বিরোধিতা করছে...সংস্কার স্তব্ধ করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়াই এদের কাজ। স্বাভাবিকভাবেই কম্যুনিজম নামক ফেইলড থিওরি ধ্বংস ছাড়া কোনও গঠনমূলক কাজ করতে পারেনা। ২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার হাতে ছিল? কর্মসংস্থানের ভাওতা কারা দেয়? ভাত দে...ভাত দে...করে চেঁচায় কারা? সবচেয়ে বেশী শিল্পের ওলা উঠেছে কাদের সময়? সেন্সাস রিপোর্ট বলছে এই দশ বছরে কর্মসংস্থান জন্য প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্যরাজ্য গুলোতে চলে গিয়েছে। বিস্কফার্ম বাঙালি বাবুর বিশুদ্ধ বাঙালি কোম্পানি, কলকাতায় উলুবেড়িয়াতে অফিস...ভেবেছিলো ধুলাগরে বা ঝাড়গ্রামেও খুলবে কম্যুনিস্টরা এমন হাল্লাকাটি শুরু করে দিলো জমি দেওয়া নিয়ে ধুত্তোর বলে চলে গেলেন হিমাচল প্রদেশে। ক্রাইসিস তৈরী না হলে কম্যুনিজম পাত্তা পে না। "অটোমেশন রাখছি রুখবো" কাদের স্লোগান ছিল? যখন হংকং ব্যাঙ্ক প্রথম কম্পিউটার আনার চেষ্টা করেছিল...দুর্জয় আন্দোলনে ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে গেছিলো। ১৯৯১তে কলকাতাকে ভারতবর্ষের আইটি হাভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল সিপিএম সেটি হতে দেয়নি...কলকাতার জায়গায় অগত্য বাঙ্গালুরে সেই তকমা পায়, আর সুদূর প্রসারী প্রভাব আমাদের পশিমবঙ্গের যুবসমাজ আজও টের পাচ্ছে।

যেই আপেল কোম্পানি মোবাইল তৈরির কারখানা চীন থেকে ভারতে এলো ওমনি কমিউনিস্টদের দালাল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই কর্ণাটকের কলুরে উইনস্ট্রোন কোম্পানির ফোন তৈরির কারখানা ভাংচুর করে...উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক ভাবে ভারতে শিল্প বান্ধব পরিবেশ নেই সেটা প্রচার করা। আমাদের বামপন্থী বন্ধুরা দাবি করেছেন বিজেপি অর্থনীতি বোঝে না। তাই বিজেপি সিএএ নিয়ে গোলমাল পাকাচ্ছে, এটা ঠিক যে গত ৩৪ বছরে যে দুই জন অর্থমন্ত্রীদের তারা উপহার দিয়েছিলেন তারা সবাই প্রেসিডেন্সি থেকে পাশ করে বিদেশে পিএইচডি করেছিলেন এছাড়া দুইজন প্রেসিডেন্সি থেকে বামপন্থী রাজনীতি করা নোবেল প্রাপক কিন্তু তাতে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ঝুলিতে কি এসেছিলো? ৮০র দশক পর্যন্ত কলকাতা হোসিয়ারি শিল্পে দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এরপর সিপিএম আর জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন এর ১৪৪ দিন ধর্মঘটের আঘাতে সেই শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়, আশঙ্কা করা হয়েছিল যে এই ধর্মঘট করা হয়েছিল সিপিএমের মালিক চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে কারণ এরপর পরেই ৯০এর দশক থেকে চীন সারা বিশ্বের টেক্সটাইলে বাজারে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে ওঠে।

শিল্পের ভ্রূণহত্যা নিয়ে মোহাম্মদ সেলিমের মোরাকান্না আর মমতার এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রির ঘোষণা বেশ হাসির খোরাক জোগাতো, যদি না পরিণতিটা এত করুন হতো। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পকে গণহত্যা করেছে সেলিমের লাল শয়তানরা, আর একটু যে আশা জেগেছিলো তাকে হত্যা করলেন মাননীয়া টাটা মোটরসকে তাড়িয়ে। ৬০/৭০ দশকের থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও বৃদ্ধির ব্যাপারে সিপিএম ও নকশালদের  কোনও দায়বদ্ধতা ছিল না...দেশভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের থেকে আগত বাঙালি হিন্দুরা কিছু না ভেবে...না বুঝে এই কমিউনিস্টদের পদাতলে চলে আসে যাতে পশ্চিমবঙ্গবাসীদের দুর্দশা, বেকারত্ব ও দরিদ্র বাড়ে, যে সব কারখানা ধর্মঘটের স্বীকার হয় তারা বেশিরভাগই অন্য রাজ্যে চলে যেতে লাগে বাঙালির ঘরে ঘরে বেকারক্ত ও দরিদ্র বাড়ে এই সমস্ত নানা কারণে (এমার্জেন্সি, কংগ্রেসীদের অত্যাচার ইত্যাদি) এরপরে বামফ্রণ্ট ক্ষমতায় আসে তারা মানুষকে আরো দরিদ্রতর করার নেশায় এগিয়ে যেতে থেকে শিল্প, শিক্ষা ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রভাব পরে তারফলে লোকদের কারিগরি ও অন্য নৈপুণ্য কমতে থাকে...মানুষকে ভিখারি বানানোর ষড়যন্ত চলতে থাকে নিপুন ভাবে। লোককে ভুল বোঝানো...ওয়েলথ তৈরী ব্যাকফুটে চলে যায়, সমভাবে বন্টন হবে বলে মিথ্যা প্রোপাগন্ডা চালাতে থাকে, ফলস্বরুপ রাজনৈতিক জ্ঞান এর অভাব ও ঐতিহাসিক ভাবে দুর্বল জাত বাঙালি আরও নতুন বিনিয়োগ টানতে পারেনা...নতুন শিল্প আসাও বন্ধ হয়ে যায়, এর সুদূরপ্রসারী কুফল হলো আজকের কর্ম, বিনিয়োগ, অনুশাসন বিমুখ বাঙালি জাতি তৈরী যারা বাইরের পৃথিবীর উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না, এর কারিগর কমিউনিস্টরা ও তাদের ৩৪ বছরের নৈরাজ্য ধ্বংসের রাজনৈতিক শাসন। মানুষকে শিল্প ও শিল্পপতিদের ঘৃণা করা মানসিকতা শিখিয়ে বাঙালীজাতিকে ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। সিপিএম মানুষের দরিদ্রদের বেসাতি করে বেঁচে আছে এটাই তাদের রাজনৈতিক মূলধন এমনকি নতুন বাঙালি প্রজন্মের কাছেও নতুন ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করার মানসিকতা নেই। শিল্প বিরোধী...শিল্প ক্ষেত্রে ঝামেলা সৃষ্টি করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী করা এদের ব্যবসা।

চীনের বৈশ্বিক অৰ্থনৈতিক কর্মকান্ডের শুরু ৯০এর দশকে...সোভিয়েতের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও পতন থেকে শিক্ষা নিয়ে ওরা সমগ্র বিশ্বের পুঁজিকে আমন্ত্রণ করার জন্য ওরা ওদের দেশের আইনের যা যা ফেরবদল করেছিল সেই সবগুলি এখানকার কমিউনিস্টরা চরম বিরোধিতা প্রতিরোধ করেছিল এবং আজও করছে। কর্নাটকে ১৩০০ কোটি টাকার লগ্নী করার কথা ছিল আইফোন এর সেখানে কতো ভাঙচুর লুঠপাঠ চালানো হলো যা সবকিছুই সংঘঠিত হয়েছিল চীনের নির্দেশে এমনকি চাইনিজ মিডিয়াও ফলাও করে সেই খবর ছেপেছে, পুলিশের হাতেও গ্রেফতার হয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের লিডার...এরাই আবার ভাত চায়। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমান ৭০ হাজার কোটি...এরপরেও তারা বলবে ভারতে জিডিপি কম হচ্ছে কেন সেটা নিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ করে লেকচার দেবে। 

* সেক্টর ৫ এ ৫০০০০ কর্মী দেখিয়ে যে আইটি বিপ্লব আর কথা বলা হতো, তা CTS/Infosys/TCS এর একটা দক্ষিণ ভারতের ক্যাম্পাসেই পাওয়া যাবে। 
* সকালের টুথপেস্ট থেকে রাতের ঘুমের ওষুধ কিছুই এই রাজ্যে আজ আর প্রস্তুত হয় না। 
*গত ৪৩ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকদের ৯৫% আজ রাজ্যের বাইরে। 
* ভিনরাজ্যে রিক্সাওয়ালা থেকে বাড়ির কাজের লোকের কাজ বাঙালিদের করতে হচ্ছে এমনকি কাশ্মীরের আপেল কুড়াতেও দ্বিধা করছে না যা প্রমাণ করে কাশ্মীরের চেয়েও এই রাজ্যের শ্রমিকদের মাইনে কম।
 
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির থেকে পয়সা খেয়ে বিশ্বমঞ্চে শিল্পায়ন পরিবেশ নিয়ে ভারতের বদনাম করার জন্য ৭০ দশকে এরা পশ্চিমবঙ্গতে শিল্প বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলো এবং সেই পরিস্থিতি কে কাজে লাগিয়ে চীন বিশ্বের শিল্পপতিদের নিজেদের দেশে বিনিয়োগ করিয়ে আজকে এশিয়ার সুপার পাওয়ার। 

সবশেষে বলি, যে রাজ্যে পেঁয়াজের জন্য মহারাষ্ট্র, ডিমের জন্য কর্ণাটক, মাছের জন্য অন্ধ্র, সিভিল সার্ভেন্টের জন্য বিহার, চিকিৎসার জন্য ভেলোর আর ব্যর্থতার দোষারোপের জন্য সর্বদা দিল্লির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় সে রাজ্যের অন্তত নিজেদের সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিদ্যার বড়াই করা সাজে না। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

If you have any doubts, please let me know

বিরোধিতা মানে শুধু অন্ধ বিরোধিতা নয়

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাস আর দাম যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে যার প্রভাব দেশের জনগণের সঙ...